যে রঙে জীবন আঁকি

যে রঙে জীবন আঁকি


কতোটুকু দুঃখ পেলে কতোটুকু কাঁদতে হবে, কিংবা কতোটুকু সুখ পেলে কতোটুকু হাসতে হবে—এই হিশেববোধ যদি আমাদের মধ্যে কাজ না করে তাহলে জীবনের অযাচিত, অযৌক্তিক আর অপ্রয়োজনীয় জটিলতা থেকে মুক্তি আমরা কোনো কালেই পাবো না। অযথা নিজেকে ট্র্যাজেডির নায়ক বানিয়ে কাছের-দূরের মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা, প্রিয়-অপ্রিয় সম্পর্কগুলোর কাছে দরকারের তুলনায় বেশি সংবেদনশীলতা প্রত্যাশা করা, কিংবা ভালো-মন্দ, কাজের-অকাজের, দৃশ্যমান-অদৃশ্য নানা কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করার প্রবণতা প্রতিনিয়ত আমাদের মনের মধ্যে একটা দুর্বোধ্য ভাবনার জটিল জাল তৈরি করে যা মূলত আমাদের মনের ময়লা। পেটে দরকারের তুলনায় ময়লা বেশি জমে গেলে গ্যাস হয়, দুর্গন্ধ হয় এবং এক সময় মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। একইভাবে মনের ময়লা ধীরে ধীরে মানুষের মানসিকতাকে নষ্ট করে, মানবিক মূল্যবোধকে ক্ষয়িষ্ণু করে তোলে। মন হয়ে ওঠে যাবতীয় অস্থিরতা আর হতাশার ভাগাড়। এ রকম বর্জ্য, পচা দুর্গন্ধে ভরা মন নিয়ে মানুষের কাছাকাছি যাওয়া যায় না, কাছে যাওয়ার অভিনয় করা যায়। কারও ভালো করা যায় না, ভালো করার অভিনয় করা যায়। নিজে ভালো থাকা যায় না, ভালো থাকার অভিনয় করা যায়। এ রকম অভিনয় যখন প্রাত্যহিক জীবনে অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন মানুষ নিছক প্রকৃতির অনভিপ্রেত করুণার পাত্র হয়ে বেঁচে থাকে। চারপাশের সবকিছু তার ওপর চরমভাবে বিরক্ত হয়ে ওঠে৷ বহু চেষ্টার পরেও প্রকৃতি থেকে এতোটুকুন আনন্দ সে কোনোভাবে অর্জন করে নিতে পারে না। এভাবে ক্ষণকালের দুঃখবোধ তার মধ্যে চিরকালের হয়ে ওঠে, যাবতীয় সৃজনশীল ভাব-কল্পনা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের স্পৃহা যায় চিরদিনের জন্য মরে। কাজেই শরীরের অন্য সব অসুখের মতো মনের অসুখ সারিয়ে তোলা জরুরি। সকল বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এক্ষেত্রে কাজ করে প্রথম এন্টিবায়োটিক হিশেবে। সবকিছুকে সহজ-সরল ও ইতিবাচক দৃষ্টিতে গ্রহণ করতে পারলে মনের মধ্যে যে এন্টিবডি তৈরি হয় তা মানুষকে বিষদ জটিল মনোভাব থেকে একটা সুন্দর গতিময় বর্তমানে নিয়ে আসে। বর্তমান মানে আনন্দ। বর্তমান মানে প্রকৃতির সহজাত, স্বতস্ফূর্ত অনুষঙ্গ। গুরুজি Eckhart Tolle বলেন, “All problems are illusions of the mind.”। বর্তমান এই ইল্যুশনকে নষ্ট করে দেয়। ফলে মনের মধ্যে জটিল জল্পনা-কল্পনা আসার পথে তৈরি হয় একটা দুর্ভেদ্য প্রতিবন্ধক, যার নাম মানসিক আত্মনির্ভরশীলতা। মানসিকভাবে আত্মনির্ভরশীল মানুষ সুখ-দুঃখকে তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে সে কেবল যাপন করে না, উদযাপন করে। সর্বোপরি কতোটুকু দুঃখ পেলে কতোটুকু কাঁদতে হবে, কিংবা কতোটুকু সুখ পেলে কতোটুকু হাসতে হবে—এই হিশেববোধ তার মধ্যে কাজ করে প্রয়োজনমত, পরিমাণমত।