যে পুরুষ সত্য হয়নি আজও
“ছ’ইঞ্চি দেহাংশের কাছে ছ’ফুট পুরুষের একি শোচনীয় পরাজয়!
এ’পুরুষ তবে শরীরী পুরুষ কেবল, আসল পুরুষ নয়।
হে ঈশ্বর, আমার পূণ্য যতো আছে তার বিনিময়ে
তোমার কাছে—
আমি এক আসল পুরুষ চাই,
অযাপিত জীবনে আমার
এক সত্য পুরুষ চাই—
যার বলিষ্ঠ আত্মার শিশ্নে হবো শীতল আমি।
ওগো জগৎস্বামী, সিদ্ধ করো সাধনা আমার।”
অন্ধকারের গভীর প্রকোষ্ঠে মধুর মিষ্টি মেয়েলি কণ্ঠে প্রার্থণা শুনে বহু বছর পর আমাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। আমাদের ঘুম ভাঙে, আমরা প্রবল উৎসাহে জেগে উঠি। তারপর আবছা আলোয় কালো ঘাসের চাদরে চিৎ হ’য়ে শুয়ে থাকা এক অস্পষ্ট নগ্ন ছায়ামূর্তির উপরে চ’ড়ে বসলে শরীরের প্রত্যেকটি শিরা-উপশিরায় আরশোলার মতো ছুটোছুটি শুরু করে আমাদের পৌরুষ।
আমরা বলি :
“ওগো দুহিতা সাধ্বী, সাধনা তোমার
সিদ্ধ হলো আজ। ঈশ্বর প্রদত্ত যথোচিত
পুরস্কার আমি; সত্য পুরুষ। এবার তবে
সংশয়-লাজ ভুলে গ্রহণ করো আমায়,
করো আলিঙ্গন ভালোবেসে।”
ছায়ামূর্তি বলে :
“কে? কে তুমি দুর্ধর্ষ পুরুষ?
রক্ত-মাংসে গড়া দেহের কঙ্কাল
কোথায় আত্মা অবিনশ্বর, হে ঈশ্বর রক্ষা করো।
নিরাত্মা প্রেতের অশুভ কবল
থেকে রক্ষা করো।
পুরুষ তো নয় আমার সমস্ত হৃদয় জুড়ে
ভয় জাগানিয়া অসুর তুমি, দূর হও!
ধ্বংস হও! নিপাত যাও! শুদ্ধ হোক
অশুদ্ধ ধরণীতল।
তিরোহিত হও চিরতরে।”
ছায়ামূর্তি হঠাৎ অন্ধকারে মিলিয়ে গেলে আমরা ভূমির ’পরে উপুর হ’য়ে শুয়ে থাকি। একটা উৎকট দুর্গন্ধ আমাদের অতিষ্ট ক’রে তোলে। আমরা আমাদের শরীরের ভেতর হাতড়ে বেড়াই। রক্তের স্রোতে সাঁতরে বেড়াই পা থেকে মাথা পর্যন্ত। তারপর বহু বছর পর আমরা আবিষ্কার করি আমাদের পচনধরা আত্মাকে। আমাদের গলিত আত্মার শিশ্ন, কুৎসিত কীটের আবাস; কী জঘন্য দুর্গন্ধ! চেতনার পুঁজ গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে। আঃ কী অসহ্য! কী বীভৎস সে দৃশ্য! আমরা বিষাদে চোখ বন্ধ ক’রে ফেলি, আমরা হয়তো মূর্ছা যাই এবং আমরা একদিন ঘুমিয়ে পড়ি, এবং অতঃপর একদিন—অন্ধকারের গভীর প্রকোষ্ঠে মধুর মিষ্টি মেয়েলি কণ্ঠে প্রার্থণা শুনে বহু বছর পর আমাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। আমাদের ঘুম ভাঙে, আমরা প্রবল উৎসাহে জেগে উঠি। তারপর আবছা আলোয়…