ফিরে এসো বাঙালি

ফিরে এসো বাঙালি


তোমরা যা কিছু করেছো—
তোমাদের সুখের জন্য; স্বার্থের জন্য।
আমার বুকের উপর পাষাণের নখের আঁচড়,
কলঙ্কের চিহ্ন মুছে যায় নি আজও। সেদিন ভোরে
দোয়েলের শীস্ শুনে ভুলে গেছি সব
জ্বালা-অভিমান। চোখ খুলে বহুদিন পর
দেখেছি ভোরের প্রথম সূর্য।
চারপাশে তোমাদের উৎসব-উল্লাসের গান
শুনে আমি ছেড়া-মলিন-ময়লা আর
রক্তের দাগ লাগা, কলঙ্কের কালি লেগে থাকা
শাদা ধুতি খুলে ফেলে লাল পাড়-
ওয়ালা সবুজ শাড়ি পরে গড়েছি নূতন
ঘর; নূতন সংসার।

স্বপ্ন দেখেছি আমি— দুপুরের রোদে
উঠোনে এলিয়ে দেওয়া ভেজা শাড়িটার
আঁচলে মুখ লুকিয়ে তুমি; তোমরা
খেলছো আমার সঙ্গে লুকোচুরি খেলা।
দুধমাখা ভাত হাতে করে
এদিক-সেদিক খুঁজে হয়রান
আমি তারপর হঠাৎ
পেছন থেকে তোমায় জড়িয়ে ধরে
বলেছি—‘এই তো মানিক, এই তো আমার প্রাণ’।

তোমরা যা কিছু করেছো—
আমার জন্য নয়। পিশাচের বজ্রমুষ্ঠিতে
ভেঙেছে আমার হাতের কাঁকন। তবু
চোখের জল মুছে তোমাদের বিজয়
দেখে হেসেছি আমি।
সেদিনের অবুঝ খোকা আমার অনেক
বড়ো হয়ে গেছো আজ। ভোগ-লিপ্সা আর
কামনার ঘোরে হারিয়ে বিবেক-বুদ্ধি লাজ-
সম্মান; ভুলেছো পবিত্র সম্পর্ক সব।
আমার বুকের উপর চড়ে বসা সেই
অসুরের দল— তাদের নিশ্বাসের সঙ্গে
তোমাদের নিশ্বাসের বড়ো মিল।
পার্থক্য শুধু—
হায়েনাদের মুখে ছিলো নিরীহ মানুষের
রক্ত-মাংসের বিশ্রী দূর্গন্ধ! আমি
দেখেছি অনেক শুঁকে
তোমাদের মুখে আজও লেগে আছে যেন
আমার বুকের দুগ্ধ। পবিত্র সুগন্ধ।

আর কতো? কতো কাল আর?
আমি বাংলা জননী তোমার— মুখ দেখে
লজ্জায় আঁচলে মুখ ঢাকবো?
লজ্জা! লজ্জা! মুখ জুড়ে লজ্জা
বুক জুড়ে হাহাকার। বিবস্ত্র আমার
দেহটিরে ঘিরে লক্ষ লোলুপ দৃষ্টি
ছিঁড়ে-খুড়ে খাবার একি তুমুল প্রতিযোগীতা!
সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে তোমরা
মাতৃস্নেহ-ছায়া হতে অনেক দূরে।
নূতন জন্মের পর তেতাল্লিশ বছর পার;
চাওয়া শুধু আজ—
ফিরে এসো। ফিরে এসো বাঙালি
সেদিনের ছোট্ট খোকা হয়ে ফিরে এসো
বিরহিণী মায়ের শূন্য বুকে।
তোমার নিষ্পাপ-পবিত্র মুখ দেখে
বুক জুড়াবো আমি
বাংলা— জননী তোমার।