একটা খারাপ মেয়ে মানুষের লাশ

একটা খারাপ মেয়ে মানুষের লাশ


একটা লাশ নাকি পড়ে আছে উত্তরপাড়া কিংবা তারও উত্তরে ধান ক্ষেতের পাশে অথবা কোনো সব্জিমাচার নিচে এবং ওটা একটা শুধু যে লাশ তা নয় বরং একটা মেয়ে মানুষের লাশ; একটা মরে যাওয়া মেয়ে মানুষ, তার লাশ। অইখানে আমার যাওয়া বারণ, কারণ আমি তো ছোটো মানুষ, আমি তো থ্রি-ফোরে পড়ি আর স্কুল থেকে ফেরার পথে আমার মা আমার জন্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু থাকে আর বলে, ‘এখনো আসে না কেন, এখনো আসে না কেন’; তাই। পাড়ার সবাই এবং আমার সহপাঠিরা লাশ দেখার জন্য স্কুলে না যেয়ে অই দিকে দৌড়োয়। আমি দরজার চৌকাঠে বসে বসে থাকি শুধু, স্কুলেও যাই না আর ভাতমাছ কিছুমিছুও খাই না। কারণ, আমার অইদিকে যাওয়া বারণ।



বলছিলাম একটা লাশ পড়ে আছে এবং শুধু যে লাশ তা নয়, একটা মেয়ে মানুষের লাশ; এমন কি কেবল মেয়ে মানুষের লাশই নয়, বরং একটা উলঙ্গ মেয়ে মানুষের লাশ। বিকেল বেলা সহপাঠিদের মুখে উলঙ্গ মেয়েমানুষের লাশের কথা শুনি আর আমার কেমন ভয় ভয় করে। ওর শরীরটা অনেক ফর্সা আর সুন্দর আর ক্ষেতের পানিতে ভিজে ভিজে চুপসানো মুড়ির মতন কেমন ঢুপসি হয়ে গেছে, ওরা বলে। আমি ওদের সব কথা বুঝি না। আমি মনে মনে একটা খারাপ উলঙ্গ মেয়ে মানুষের লাশের ছবি আঁকি। অই লাশটা ছিলো একটা খারাপ উলঙ্গ মেয়ে মানুষের লাশ—পাড়ার সবাই এ কথাই অনেক দিন ধরে বলছিলো। আমিও ভাবি, খারাপ না হলে অমন খোলা জায়গায় পরনের সায়া-ব্লাউজ সবকিছু মুখের ভেতর গুজে দিয়ে কেউ মরে পড়ে থাকে অমন করে?