এই তো জীবন
পরীক্ষামূলকভাবে ২৮ মে, ২০১৫ সালে গানটি ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়েছিল।
জীবনটাকে বেচে দিতে কাগজের ঠোঙায় ভরে যেদিন নিউ মার্কেটের গেইটে বসলাম, জনৈক ভদ্রলোক এসে দাম হাঁকলেন এক টাকা দশ পয়সা। আমি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকাতেই তিনি ভয়ে ভয়ে বলতে বলতে চলে গেলেন, ঠোঙাটার দাম এর চেয়ে বেশি হবে না; হওয়া উচিৎ নয়।
আহা রে জীবন! আহা রে জীবনের কতো রং! কতো ঢঙের জীবন। পড়ে রইলো জীবন নিয়ে ব্যবসাপাতি। ফিরে গেলাম ঘরে। ঘর মানে বক্শী বাজার খাজে দেওয়ান প্রথম লেনের সেই বাসাটা। অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে কালো প্রকোষ্ঠের ভেতর হারিয়ে গিয়ে যে ঘরে প্রবেশ করতে হয়, সেই ঘর। ঘরের একটা বিশেষত্ব ছিলো। মেঝেতে উপুর হয়ে শুয়ে থাকলে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে নিউ মার্কেটের সামনের ওভারব্রীজে দাঁড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকা মেয়ে মানুষদের বুক দেখা যেতো। আবার চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে শোনা যেতো আজিমপুর কবরস্থানের অসংখ্য মৃত মানুষদের ভয়ংকর নিঃশ্বাসের শব্দ। এসব কোনো কিছুর প্রতিই আমার আগ্রহ ছিলো না। ঘরে তাই মন টেকেনি খুব একটা। পুরান ঢাকার অলিতেগলিতে তখন আমার অবাধ ভবঘুরেমিপনা। কতো পথের ধুলো যে লেগেছে পায়ে, কতো স্বপ্ন যে ধুলোর মতো ধুয়ে ফেলেছি পা থেকে। হিশেব নেই।
খাজে দেওয়ানের অন্ধকার ঘরের প্রত্যেকটি কালোর বিন্দু, কলা ভবনের ২০১৭ নম্বর কক্ষে আমার কন্ঠস্বরের প্রতিটা প্রতিধ্বনি, টিএসসিতে জয়ধ্বনির প্রতিটি সন্ধ্যা, কিংবা জগন্নাথ হলের মন্দির, মন্দিরের শীতল মেঝে, পুরান ঢাকা, বুড়িগঙ্গার নোংরা জলের ঢেউ—এরা সবাই, এরা সব্বাই আমার সে সময়কার প্রচণ্ড জীবনহীনতার সাক্ষী। আমি ভালো থাকিনি, এরা জানে, পৃথিবীর জীবন্ত মানুষগুলো জানে না, আমি ভালো থাকবার অভিনয় করেছি কেবল। ভালো থাকিনি।
দিনের আলো রোজ ভোরের বেলায়
পরম আদরে ঘুম যে ভাঙায়,
রাতের আঁধার প্রতি সন্ধ্যায়
ঘুম পাড়াতে এসে দুচোখ রাঙায়।
এমনি করেই অন্তবিহীন,
প্রতিটা রাত প্রতিটা দিন,
ছন্নছাড়া আর ঠিকানাহীন
চলে শূন্য জীবনের গল্প বলা।
এই তো জীবন
এক সূর্যের মতন
নিজেরই দহনে নিজেই জ্বলা।
কী জানি কীসের খোঁজে
বুঝে আর না বুঝে
পথে পথে নিরন্তর ছুটে চলা।
শূন্য জীবনের গল্প লেখা
শুরু হলো কোন্ পথের বাঁকে,
কেউ তো পাবে না সে পথের দেখা
তবু দুচোখে স্বপ্ন আঁকে।
স্বপ্ন ভাঙে দুঃস্বপ্নের ঝড়ে
স্বপ্নীল দুটি চোখ ধুলোয় ভরে
পথের মানুষগুলো পথেই মরে
তবু থামে না জীবনের গল্প বলা।
এই তো জীবন
এক সূর্যের মতন
নিজেরই দহনে নিজেই জ্বলা।
কী জানি কীসের খোঁজে
বুঝে আর না বুঝে
পথে পথে নিরন্তর ছুটে চলা।
ভালো না থাকা সময়গুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমার এই গানটির সৃষ্টির নেপথ্যে আমার চেয়ে সে সময়গুলোর ভূমিকাই প্রধান, অস্বীকার করবার জো নেই।