আমাদের প্রথম জীবনের সন্ধ্যেগুলো

আমাদের প্রথম জীবনের সন্ধ্যেগুলো


এই যে আমি, এই যে আপনি। এই যে আমাদের চেনাজানা কাকভেজা সন্ধ্যা। বৈশাখের অভদ্র সব বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে পাশাপাশি হেঁটে হেঁটে আমরা এলাম এতোটা দূর। কিন্তু তবুও আমার হাতটি কেন আপনার হাতটিকে একবারের জন্যেও ছুঁয়ে দিতে পারলো না? অথবা ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া আপনার আঙুলগুলোই বা কেন আমার আঙুলগুলোকে একটু নাড়িয়ে দিতে এলো না? আমরা কি এতোই অচেনা?

আপনি হয়তো হাসবেন। বলবেন, “এই শহরে আমার চেনা যদি কেউ থাকে, সে তো আপনি।”

এ কথা শুনে আমার অভিমান হবে একটু। আমি হয়তো হটাৎ দাঁড়িয়ে যাবো। প্রচণ্ড আক্ষেপ নিয়ে বলবো, “তাহলে? এতো কাছে কাছে থেকেও কেন এতো এতো দূরে আমরা? এতোই যদি চেনা হই?”



পথের দু’ধারে ছোটো ছোটো বুনো কচুগাছের সারি। পাতায় পাতায় বৃষ্টির ফোটা জমে জমে কেমন হীরের টুকরোটি হয়ে রয়েছে। আপনি এক এক করে অনেকগুলো কচুপাতা নাড়িয়ে দেবেন, হীরের টুকরোগুলো সবুজ ঘাসের গায়ে লুকিয়ে যেতে যেতে থাকবে। আপনি আবার হাসবেন, বলবেন, “অচেনা মানুষকে যতোটা সহজে চেনা যায়, চেনা মানুষকে ততোটা সহজে চেনা যায় কি?”

এ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই আমার কাছে। আমি তাই জানলাটা বন্ধ করে দিলাম। তারপর বুকের নিচে বালিশটা চেপে পরীক্ষার নোটখাতা ভরে ভরে এই সব হাবিজাবি লিখে লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলাম। আজ থেকে প্রায় এক হাজার একশো একুশ বছর পরে আপনি যখন আমার টাইমলাইন খুঁজে এই লেখাটি পড়বেন তখন হাসবেন, আর দেখবেন বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। আমার লেখার শেষ লাইনটিতে আপনার চোখ আটকে থাকবে চিরটাকাল—“পাগলের মতো বৃষ্টি হোক, আমার কী!”